মোঃ আসাদুল হক সবুজ, বরগুনা জেলা প্রতিনিধিঃ উপজেলা পরিষদে কর্মরত এক নারী স্টাফকে ধর্ষণ চেষ্টা ও যৌন হয়রানী করার অভিযোগ পাওয়া গেছে বরগুনার আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নাজমুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ভূক্তভোগী ওই নারী এ ঘটনার বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভূক্তভোগী ঐ নারীর স্বামী আমতলী উপজেলা পরিষদের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদে কর্মরত ছিলো। স্বামীর মৃত্যুর পর ৬ বছর আগে ওই নারীকে মাস্টার রোল ভিত্তিক উপজেলা পরিষদে নিয়োগ দেয়া হয়।
গত ছয়মাস আগে আমতলীতে যোগদান করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুল ইসলাম। ভূক্তভোগী ঐ নারী স্টাফকে কারনে অকারনে তার অফিসে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানী ও কুপ্রস্তাব দেন তিনি। মাঝে মধ্যে ওই নারী স্টাফের শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে স্পর্শ করে যৌন হয়রানী করেন। তারপর ওই নারীর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে দিনে ও রাতে বার বার কল দিয়ে তাকে বিরক্ত করতে থাকেন।
ঘটনার দিন গত বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে অফিসে আসেন সহকারী কমিশার (ভূমি) নাজমুল ইসলাম। তখন ওই নারী কর্মচারী উপজেলা পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর আবদুস সালামের রুমে বসে ছিলেন। এ সময় এসিল্যান্ড সেখানে গিয়ে সালামকে তার রুম থেকে বের হতে বলেন। তখন সালাম রুম থেকে বের হয়ে যান। এসময় এসিল্যান্ড ওই নারী কর্মচারীকে খাস জমি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রকাশ্যে তাকে জড়িয়ে ধরে ঠোটে চুমো দেয় এবং যৌন উত্তেজনায় তার শরীরের বিভিন্ন গোপনস্থানে স্পর্শ করেন। এক পর্যায়ে তার পড়নে থাকা ব্লাউজ ছিড়ে ফেলে ধর্ষণের চেষ্টা করে বলে ভূক্তভোগী ওই নারী কর্মচারী অভিযোগ করেন। তখন ভূক্তভোগী নারী দৌড়ে পালিয়ে যেতে চাইলে তার পড়নের শাড়ী ও ব্লাউজ ধরে টানাটানি করে ধর্ষণ চেষ্টা চালায় এসিল্যান্ড। তখন ওই ভূক্তভোগী নারী চিৎকার দিলে অফিসে থাকা অন্যান্য কর্মকর্তা- কর্মচারী ও সেবা নিতে আসা কয়েকজন এগিয়ে আসে । এ সময় ওই নারী কর্মচারীর চাকরি বাতিল ও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সহকারী কমিশানার (ভূমি) দ্রুত রুম থেকে চলে যান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা পরিষদের কয়েক জন কর্মচারী জানায়, মাস্টার রোলে কাজ করা ওই নারী কর্মচারীর সাথে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রকাশ্যে যৌন হয়রানিমুলক ঘটনা ঘটিয়েছে। যা আমাদের সহকর্মী ও পরিষদে সেবা নিতে আসা অনেকেই দেখেছেন।
উপজেলা পরিষদে সেবা নিতে আসা কবির মালাকারসহ বেশ কয়েকজন জানায়, আমরা উপজেলা নির্বাচন অফিসে কাজ শেষ করে যাওয়ার সময় উক্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করি।
ভূক্তভোগী ওই নারী কর্মচারী বলেন, এসিল্যান্ড স্যারে প্রায়ই সময় ইউএনও স্যারের রুমে ডেকে আমাকে কুপ্রস্তাব দিতো এবং আমার শরীরের গোপন যায়গায় স্পর্শ করতো। বিষয়টি আমি কয়েকজনকে জানিয়েছি। এরপর বৃহস্পতিবার এসিল্যান্ড স্যার প্রকাশ্যে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঠোটে কামড় দেয় এবং শরীরের বিভিন্ন যায়গায় জোড়কের হাত দেয়, এবং যৌনতা মুলক আচরন করে ধর্ষণ চেষ্টা চালায়। আমি দৌড়ে পালাতে চাইলে তিনি আমার পড়নে থাকা শাড়ী ধরে টান দেয় এতে আমার কাপড় অর্ধেকেরও বেশী খুলে যায়। আমি এ ঘটনার বিচার চেয়ে ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুল ইসলাম বলেন, এটা আমার বিরুদ্ধে একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। আমাকে ফাসাতে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে অনেক বড় আকারে দেখিয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা।
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আমতলীর ইউএনওর সাথে আমার কথা হয়েছে, তিনি ছুটিতে আছেন। তিনি আসলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।